উড়ুক্কুর জীবন আপনি কোথায় দেখেছেন ? মাঝে মধ্যেই আমাকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় উত্তরে আমার বলতে ইচ্ছে হয়, উড়্ক্কুর জীবন আমি কোথায় দেখি নি ? তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশটির প্রতি পদক্ষেপে আছে এই উপন্যাসের বাস্তবতা। আমি কেবল চেষ্টা করেছি যা দেখেছি তার সাথে যা দেখি নি, কিন্তু প্রবল অনুভব দিয়ে উপলব্ধি করেছি, তার একটা সমন্বয় ঘটাতে। আমি কখনই চিৎকার সর্বস্ব শিল্প পছন্দ করি না। আমি চাই নি কোনো চরিত্র চিৎকার করে সমাজপতিদের কাছে তার জীবনের বিবরণ দিক। তার জীবনের দুঃসহ বাস্তবতাই তার প্রতিবাদ। উড়ুক্কুর বাস্তবতা এই জন্যই হয়েতো রূঢ় হয়ে উঠেছে। শিল্পে জান্তব শ্লোগান আমার পছন্দ নয়, তা-ই ছেলেবেলা থেকেই সবকিছু একটু ভিন্ন চোখে দেখার অভ্যাসে উড়ুক্কুর প্রতিটি বাস্তবতাকে নির্মম আর রূঢ় করে তুলতে চেয়েছি, যাতে সেই হিঃস্র বিবমিষায় বাস্তবতা স্লোগানের চেয়ে প্রগাঢ় হয়ে উঠতে পারে। এর সাথে যুক্ত করতে চেয়েছি মনঃসঙ্কট, পরাবাস্তবতা, জৈবিক সঙ্কট, অস্তিত্ব সঙ্কট এইসব বিষয়কে। উড়ুক্কু আমার প্রথম উপন্যাস। শিশু যেরকম প্রথমে শেখার সময়টাতে সব একসাথে শিখতে চায়, সবটাই ধরতে চায় এক মুঠোতে, যা চেনে না তার দিকে দুর্মর চোখে চেয়ে তার একটা নাম বানিয়ে নেয় বুকে, চাঁদ দেখে মনে করে বুঝিবা অগ্নিগোলক গল্পের সীমিত একটা বৃত্তের বাইরে এসে উড়্ক্কুর সময় আমার হয়েছিলো সেই দশ। এখন লক্ষ্য করছি, এই গ্রন্থে, সেই ছিন্নভিন্ন আবেগে কিছু সূক্ষ্ম অসঙ্গতি যা হয়তো অন্যের চোখে তেমনভাবে পড়ছে না, কিছু ফাঁক, যা আরও কিছু বিষয়ে পূর্ণ হতে পারে এসব রয়ে গেছে। সপ্তম সংস্করণে এসে আমি উপন্যাসের আবেগের মধ্যে ছুরি না চালিয়ে বিষয়বস্তুর কোন মাত্র পরিবর্তন না ঘটিয়ে সেই সূক্ষ্ম জায়গাগুলো পূরণ করতে চেয়েছি মাত্র। কিঞ্চিত ভাষার পরিবতর্ন ঘটেছে তা-ই, কিছু পৃষ্ঠা বেড়ে গেছে প্যারা ঠিক করতে গিয়ে। অনে অংশ ছেঁটে ফেলে দিতে পারতাম, সাহস করি নি, কেননা তাহলে এই উপন্যাস এক-চর্তুথাংশ এক চটি বইয়ে রূপান্তরিত হতো। উড়ুক্কু প্রথম বেরিয়েছিলো বড়ো নিঃশব্দে। তবুও সেই সময় এরকম একটি বৃহদাকৃতির বই বের করে আহমেদ মাহমুদুল হক যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সেই ঋণ অপরিশোধ্য। আমার স্বামী আশরাফ আহমদ, যে ক্রমাগত উদ্দিপ্ত করেছে একটি দীর্ঘ উপন্যাস লেখার জন্য, আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ আখতার হোসেনের কাছে, যিনি চেয়েছেন এই বইটি একশো ভাগ ক্রটিমুক্ত থাকুক। প্রুফ করতে গিয়ে অকল্পনীয় দুর্ভোগ পুহিয়েছেন যিনি, সেই এস.এম.মাসুমর প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা। এই বইকে কেন্দ্র করে সবচাইতে বেশি অনুভব যাঁর প্রতি সেই শ্রদ্ধেয় কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের প্রতি রইলো আমার অসীম কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা। ভালোবাসা উড়ুক্কুর ব্যাপক পাঠকদের প্রতি।
About This Books