Authors
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী বিস্তৃত। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮১ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে একটি বিরোধীদলবিহীন নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। নির্বাচনটি বিরোধীদল কর্তৃক বর্জিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি সহিংসতায় দুষ্ট ও বিরোধীদল কর্তৃক সাজানো নির্বাচন হিসেবে সমালোচিত একটি নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন।
হাসনাত আব্দুল হাই (জন্ম: ১৯৩৯) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি কবি ও ঔপন্যাসিক। তাঁর পিতা আবুল ফতেহ এবং মাতা আয়েশা সিদ্দিকা। তাঁর পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত সৈয়দাবাদ গ্রামে। তিনি ঢাকা, ওয়াশিংটন, লন্ডন ও কেমব্রিজে লেখাপড়া করেন। অধ্যাপনা দিয়ে তিনি চাকরি জীবন আরম্ভ করেন। তারপর সিভিল সার্ভিস থেকে সরকারি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন ও ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদ থেকে অবসর লাভ করেন। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের সংখ্যা চার, উপন্যাস তেইশ, ভ্রমণ কাহিনি ছয় এবং প্রবন্ধ দুই। তিনি মূলত ঔপন্যাসিক ও ভ্রমণ কাহিনিকার হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার এর জন্য মনোনীত হয়। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
শহীদুল্লা কায়সার (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ - ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী। তার প্রকৃত নাম ছিল আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা। তিনি ১৯৬৯ সালে উপন্যাসে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে সাংবাদিকতায় মরণোত্তর একুশে পদক এবং সাহিত্যে ১৯৯৮ সালে গল্পে অবদান রাখার জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার স্থানীয় সহযোগী আল-বদরের হাতে অপহৃত হন। ধারণা করা হয় যে, অপহরণকারীদের হাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি এশীয়দের মধ্যে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
রুশদী শামস এর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে। ছোটবেলা থেকেই সায়েন্স ফিকশন পড়তে এবং লিখতে ভালবাসেন। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়ে লিখেছেন দুই বাংলার স্বনামধন্য সব পত্রপত্রিকায়। “ইবাইজা মেশিন” লেখকের প্রথম প্রকাশিত সায়েন্স ফিকশন গল্পগ্রন্থ। কম্পিউটার সায়েন্সে খুলনা প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে ব্যাচেলর, ইংল্যান্ডের বোল্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ক্যানাডার ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট শেষ করেছেন। লেখক এখন ক্যানাডায় রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসাবে নিয়োজিত আছেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) হলেন একজন বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক, কলম লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনকর্মী। তার লেখা কিছু উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তিনি অবসরে চলে যান। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যলিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি ও বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৮ বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হন।
আনোয়ারা সৈয়দ হক (জন্ম ৫ নভেম্বর, ১৯৪০) হলেন একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক। তিনি বেশ কিছু গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার রচনায় মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন। উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ২০১০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। পারিবারিক জীবনে তিনি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিণী ছিলেন। এছাড়াও তিনি অনুসন্ধান কমিটি, ২০২২-এর সদস্য।
পান্না কায়সার ২৫ মে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার আরেক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। তার স্বামী শহীদুল্লা কায়সার একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতিক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কজন সদস্য শহীদুল্লা কায়সারকে তার বাসা ২৯ বি কে গাঙ্গুলী লেন থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেন নি। লেখালেখির জগতে পান্না কায়সারের প্রবেশ ১৯৯১-এ প্রথম গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ আগে ও পরে বহুল আলােচিত ও প্রশংসিত । ১৯৯২-তে প্রকাশিত হয়েছে মুক্তি, নীলিমায় নীল, হৃদয়ে একাত্তর ও কাব্যগ্রন্থ বৃষ্টির শব্দ না এলে কান্না আসে না । পান্না কায়সার ১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখার জন্য তাকে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
রফিকুল ইসলাম ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দিশিবিরে নির্যাতিত হন। সাহিত্য চর্চা ও গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে। এছাড়াও তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কার এবং মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক লাভ করেছেন।
আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯) বাংলাদেশের একজন মুক্তমনা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে কবি, প্রবন্ধকার ও গবেষক। তিনি ১৯৪৭ সালে নড়াইল মহকুমা হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন। পরে তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় হরগঙ্গা কলেজ, মুন্সীগঞ্জ থেকে ১৯৪৯ পাশ করেন।তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে রবীন্দ্রত্ত্বাচার্য উপাধিতে ভূষিত করে। ব্যক্তি জীবনে তিনি এজকন চিকিৎসক।