১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন আমি লন্ডনে। সে বছরের শেষের দিকে বৃটেনে বসবাসকারী প্রগতিশীল বাঙালিরা বাংলাদেশে সামরিক—ফ্যাসিবাদের অভ্যুত্থানের বিরোধিতা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে এক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনেরই মুখপত্র হিসেবে ১৯৭৬ সালের গোড়ায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘বাংলার ডাক’। এই পত্রিকায় ‘মুজিব হত্যার নেপথ্যে’ নামে আমি একটি ধারাবাহিক নিবন্ধ লিখতে শুরু করি। এটি অনেকটা স্মৃতিচারণমূলক লেখা। আমার ব্যক্তিগত ডায়েরির বিভিন্ন ঘটনা ও তথ্যকে সামনে রেখে আমি সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ দ্বারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পটভূমি অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছি। কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পেঁৗছিনি। বর্ণিত ঘটনাগুলোই তাদের নিজস্ব ভাষ্য ও বিশ্লেষণ। দেড় যুগ আগে লেখা এই স্মৃতিচিত্রকে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর বই হিসেবে প্রকাশের ইচ্ছে আমার বহুদিনের। কিন্তু ‘বাংলার ডাক’—এ প্রকাশিত লেখার সকল কাটিংয়ের সংগ্রহ আমার কাছে না থাকায় সে ইচ্ছে আর পূর্ণ হয়নি। অগ্রজপ্রতিম সাংবাদিক আবদুল মতিন স¤প্রতি তাঁর সংগ্রহশালা থেকে অধুনালুপ্ত ‘বাংলার ডাক’ পত্রিকার কপি উদ্ধার করে আমার লেখাগুলো বহু পরিশ্রম করে সাজিয়ে গুছিয়ে আমার হাতে দিয়েছেন। তা না হলে এই বইটি প্রকাশের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বইটি ‘মুজিব হত্যার নেপথ্যে’র বদলে ‘ইতিহাসের রক্তপলাশ : পনেরোই আগস্ট পঁচাত্তর’ এই নামে প্রকাশ করা হলো। তেমন কিছু সংশোধন ও পরিবর্তন এই বইয়ে করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু—অনুরাগী বাঙালিদের হাতে শেষ পর্যন্ত বইটি তুলে দিতে পারায় আমি আনন্দিত। বইটি পুনর্মুদ্রণের অনুমতি আগামী প্রকাশনীকে প্রদান করছি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ৫৬ মেথুয়েন রোড, এজওয়ার, ইংল্যান্ড। ২০ মার্চ ২০১৭
About This Books