প্রাচীন সভ্যতার দেশ ঊর্বরা ভূমি ভারতবর্ষে যুগে যুগে নানা ভাষা জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটেছে-বৈদিক আর্যভাষা থেকে পাঠান, মুঘল, সর্বশেষ ইংরেজ। এদের কেউ থেকেছে, কেউ চলে গেছে ধনরত্ন লুট করে, ইংরেজও তাই, ১৯০ বছরের শাসন শেষ করে। কবির ভাষায়- ‘হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন শক হুন দল পাঠান মোঘল একদেহে হল লীন।’ এভাবে গড়ে উঠে বহুজাতিক, বহুভাষিক, বহুসংস্কৃতির সংমিশ্রণে বহুত্ববাদী আধুনিক ভারতবর্ষ। ঐতিহাসিক সত্যবিচারে কেউ কাউকে অস্থানিক বলতে পারবে না। সবাই বহিরাগত, আবার সবাই স্থানীয়। নিরপেক্ষ ইতিহাসবিদগণ সময় বিচারে ভারতীয় শাসন পর্বকে প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ ও আধুনিক যুগে বিভক্ত করেছেন। শেষোক্ত কালপর্বটিকে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, দর্শন বিচারে আধুনিক বলা হয়েছে। সেই আধুনিকতা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ভাষিক জনপ্রিয়তার কারণেই বোধ হয় ফার্সি রাজভাষাকে সরিয়ে নব্য রাজভাষা হিসেবে প্রবর্তিত ইংরেজি ব্রিটিশ শাসন অবসানের পরও ত্রিধাবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে আধা রাজভাষা বা ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে সচল। চতুর ইংরেজ নিজ স্বার্থে স্থানীয়দের মধ্যে যে শিক্ষিত শ্রেণির সৃষ্টি করেছিল, তাদের উত্তর-পুরুষই ইংরেজিকে ধরে রেখেছে শিক্ষায়তন-আদালত থেকে রাষ্ট্র কর্মে।
About This Books