About This Books

নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে

নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে

  • Author: সামিয়া নিপা
  • Publisher: সময় প্রকাশন
  • Category: উপন্যাস
  • ISBN: 9789844584266
  • Status: FREE
0 Review

স্কুলে পড়ি যখন তখন একবার হুট করেই বেশ সাহিত্য চর্চা করার ইচ্ছা মনে জাগল। প্রথমে ইচ্ছে ছিল গল্প লিখে ফেলবো তবে ব্যাপারটা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আমার ধৈর্যচ্যুত হলো। তবে অনেক চেষ্টা করে একখানা কবিতা ঠিকই লিখে ফেললাম। যতবার নিজের কবিতা পড়ি ততবারই নিজেই নিজের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। তবে অন্য কাউকে পড়ানোর মতো সৎ সাহস ছিল না। যদি পড়ে কেউ সমালোচনা করে কিংবা ঠাট্টা করে আমার প্রতিভা নিয়ে। তবে কবিতা লিখে ফেলার এই উত্তেজনাটা কোনোভাবেই নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারছিলাম না, তাই একদিন চুপি চুপি আব্বুকে পড়িয়ে শোনালাম। আমি জানতাম, কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং যা কিছুই লিখি না কেন আমার বাবা তার প্রশংসা করবেই। ঠিক তাই হলো তবে মিছেমিছি প্রশংসার মাত্রাটা সেদিন অনেক বাড়িয়ে করলেন হয়তো উৎসাহ দেওয়ার জন্য। আব্বুর মামা, দেশের স্বনামধন্য লেখক ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর সাথে তুলনা করে বললেন, ঠিক মতো লেখালেখি চর্চা করলে আমিও নাকি একদিন দাদার মতোই বড় কোনো লেখক হতে পারব। আমার ছোট্ট কিশোর মন আনন্দে ভরে গেল। আমাদের স্কুল থেকে প্রতিবছর নূন প্রবাহ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ হতো। আমি উৎসাহ পেয়ে আমার লেখাটি নূন প্রবাহে ছাপানোর জন্য জমা দিলাম। সেইবার আমি নতুন বছর, নতুন ক্লাস, নতুন বইপত্র সব কিছুর আনন্দ ছাপিয়ে শুধুমাত্র নূন প্রবাহ ম্যাগাজিনটি হাতে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে খুঁজছিলাম আমার কবিতাটি। পুরো ম্যাগাজিন কয়েকবার খোঁজার পরে অনুধাবন করলাম, ষষ্ঠ শ্রেণির সেই বালিকাটির লেখাটি ছাপানো হয়নি। সেদিনই আমার সাহিত্যচর্চার সুপ্ত বাসনাটি মরে গেল। বাড়ি ফিরে এসে নূন প্রবাহ ম্যাগাজিনটি বুকশেলফের একদম পেছনের তাকে লুকিয়ে রাখলাম। যেন আমার ভুলোমনা বাবার চোখের সামনে কোনোভাবেই না পড়ে, কারণ তাহলে আমার সাথে সাথে আরও একজনের মনও ভেঙ্গে যেত। বেশ কিছুদিন পরে জানতে পেরেছিলাম আমার সেদিনের সেই লেখাটি হারিয়ে গিয়েছিল ক্লাস ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে। ব্যাপারটা নিয়ে সে যথেষ্ট অনুতপ্ত ছিল তাই তখন না জানালেও পরে একদিন এসে জানিয়েছিল। রাগ করার থেকেও বরং আমার কিঞ্চিৎ আনন্দ হচ্ছিল। না ছাপানোর লজ্জার থেকে হারিয়ে যাওয়াটা বরং শ্রেয় মনে হয়েছিল। কবিতাটির আর কোনো কপি আমার কাছে ছিল না। আমার সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাটির একমাত্র পাঠক ছিলেন, ‘আমার বাবা’। এবারের অমর একুশে বইমেলায় আমার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় আসা পরিচিত-অপরিচিত অনেক পাঠকই হয়তো আমার এই বইটি পড়বেন। কিন্তু আমার প্রথম লেখাটার মতোই আমার প্রথম পাঠক যে হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। আমি চোখ বন্ধ করলেই কল্পনা করতে পারি; যেই মানুষটাকে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছিলাম সোফায় বসে হয় খবরের কাগজ নয় কোনো গল্পের বইয়ে ডুবে আছেন, সেই মানুষটি কিনা দুই-মলাটের নতুন একটি বইয়ের ঘ্রাণ নিচ্ছেন আর মুগ্ধ হয়ে পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছেন। এরপর পড়া শেষ করে মিছে মিছে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন তার আদরের ছোট বিলি­ ছানাকে। আমার প্রথম উপন্যাস আমার প্রথম পাঠক, আমার বাবার জন্য।

Summary

Tab Article

স্কুলে পড়ি যখন তখন একবার হুট করেই বেশ সাহিত্য চর্চা করার ইচ্ছা মনে জাগল। প্রথমে ইচ্ছে ছিল গল্প লিখে ফেলবো তবে ব্যাপারটা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আমার ধৈর্যচ্যুত হলো। তবে অনেক চেষ্টা করে একখানা কবিতা ঠিকই লিখে ফেললাম। যতবার নিজের কবিতা পড়ি ততবারই নিজেই নিজের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। তবে অন্য কাউকে পড়ানোর মতো সৎ সাহস ছিল না। যদি পড়ে কেউ সমালোচনা করে কিংবা ঠাট্টা করে আমার প্রতিভা নিয়ে। তবে কবিতা লিখে ফেলার এই উত্তেজনাটা কোনোভাবেই নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারছিলাম না, তাই একদিন চুপি চুপি আব্বুকে পড়িয়ে শোনালাম। আমি জানতাম, কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং যা কিছুই লিখি না কেন আমার বাবা তার প্রশংসা করবেই। ঠিক তাই হলো তবে মিছেমিছি প্রশংসার মাত্রাটা সেদিন অনেক বাড়িয়ে করলেন হয়তো উৎসাহ দেওয়ার জন্য। আব্বুর মামা, দেশের স্বনামধন্য লেখক ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর সাথে তুলনা করে বললেন, ঠিক মতো লেখালেখি চর্চা করলে আমিও নাকি একদিন দাদার মতোই বড় কোনো লেখক হতে পারব। আমার ছোট্ট কিশোর মন আনন্দে ভরে গেল। আমাদের স্কুল থেকে প্রতিবছর নূন প্রবাহ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ হতো। আমি উৎসাহ পেয়ে আমার লেখাটি নূন প্রবাহে ছাপানোর জন্য জমা দিলাম। সেইবার আমি নতুন বছর, নতুন ক্লাস, নতুন বইপত্র সব কিছুর আনন্দ ছাপিয়ে শুধুমাত্র নূন প্রবাহ ম্যাগাজিনটি হাতে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে খুঁজছিলাম আমার কবিতাটি। পুরো ম্যাগাজিন কয়েকবার খোঁজার পরে অনুধাবন করলাম, ষষ্ঠ শ্রেণির সেই বালিকাটির লেখাটি ছাপানো হয়নি। সেদিনই আমার সাহিত্যচর্চার সুপ্ত বাসনাটি মরে গেল। বাড়ি ফিরে এসে নূন প্রবাহ ম্যাগাজিনটি বুকশেলফের একদম পেছনের তাকে লুকিয়ে রাখলাম। যেন আমার ভুলোমনা বাবার চোখের সামনে কোনোভাবেই না পড়ে, কারণ তাহলে আমার সাথে সাথে আরও একজনের মনও ভেঙ্গে যেত। বেশ কিছুদিন পরে জানতে পেরেছিলাম আমার সেদিনের সেই লেখাটি হারিয়ে গিয়েছিল ক্লাস ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে। ব্যাপারটা নিয়ে সে যথেষ্ট অনুতপ্ত ছিল তাই তখন না জানালেও পরে একদিন এসে জানিয়েছিল। রাগ করার থেকেও বরং আমার কিঞ্চিৎ আনন্দ হচ্ছিল। না ছাপানোর লজ্জার থেকে হারিয়ে যাওয়াটা বরং শ্রেয় মনে হয়েছিল। কবিতাটির আর কোনো কপি আমার কাছে ছিল না। আমার সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাটির একমাত্র পাঠক ছিলেন, ‘আমার বাবা’। এবারের অমর একুশে বইমেলায় আমার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় আসা পরিচিত-অপরিচিত অনেক পাঠকই হয়তো আমার এই বইটি পড়বেন। কিন্তু আমার প্রথম লেখাটার মতোই আমার প্রথম পাঠক যে হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। আমি চোখ বন্ধ করলেই কল্পনা করতে পারি; যেই মানুষটাকে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছিলাম সোফায় বসে হয় খবরের কাগজ নয় কোনো গল্পের বইয়ে ডুবে আছেন, সেই মানুষটি কিনা দুই-মলাটের নতুন একটি বইয়ের ঘ্রাণ নিচ্ছেন আর মুগ্ধ হয়ে পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছেন। এরপর পড়া শেষ করে মিছে মিছে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন তার আদরের ছোট বিলি­ ছানাকে। আমার প্রথম উপন্যাস আমার প্রথম পাঠক, আমার বাবার জন্য।

Related Books