About This Books

আরেক ফাল্গুন

আরেক ফাল্গুন

  • Author: জহির রায়হান
  • Publisher: অনুপম প্রকাশনী
  • Category: সমকালীন গল্প
  • ISBN: 9789844042711
0 Review

আরেক ফাল্গুন”বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃরাত দুপুরে সবাই যখন ঘুমে অচেতন তখন বৃটিশ-মেরিনের সেপাহীরা এসে ছাউনি ফেলেছিলাে এখানে। শহরের এ-অংশটায় তখন বসতি ছিলাে না। ছিলাে, সার-সার ঊর্ধ্বমুখী গাছের ঘন অরণ্য। দিনের বেলা কাঠুরের দল এসে কাঠ কাটতাে আর রাতে হিংস্র পশুরা চরে বেড়াতাে। শহরে তখন গভীর উত্তেজনা। লালবাগে সেপাহীরা যে-কোনাে মুহূর্তে বিদ্রোহ করবে। যে ক’টি ইংরেজ-পরিবার ছিলাে তারা সভয়ে আশ্রয় নিলাে বুড়িগঙ্গার ওপর গ্রিনবােটে।খবর পেয়ে যথাসময়ে বৃটিশ-মেরিনের সেনারা এসে পৌঁছেছিলাে আর শহরের এঅংশটা দখল করে তাঁবু ফেলেছিলাে এখানে। সে থেকে এর নাম হয়েছিল, আন্ডারগােরা ময়দান। লােকে বলতাে আন্ডারগােরার ময়দান। শেষরাতে, লালবাগ নিরস্ত্র সেপাহীদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করেছিলাে তারা। মানুষের রক্তে লালবাগের মাটি লাল হয়ে উঠে। কিছু সেপাহী মার্চ করে পালিয়ে যায় ময়মনসিংহের দিকে। যারা ধরা পড়ে, তাদের ফাঁসি দেয়া হয় আন্ডাগােরার ময়দানে। মৃতদেহগুলােকে ঝুলিয়ে রাখা হয় গাছের ডালে ডালে। লােকে দেখুক। দেশদ্রোহীর শাস্তি কত নির্মম হতে পারে, স্বচক্ষে দেখুক নেটিভরা।এসব ঘটেছিলাে একশাে বছর আগে। আঠারােশো সাতান্ন সালে। আন্ডারগােরার ময়দান এখনাে আছে। শুধু নাম পালটেছে তার। লােকে বলে, ভিক্টোরিয়া পার্ক। সে অরণ্য আজ নেই। মাঝে, একটা প্রচণ্ড ঝড় হয়েছিলাে। সে ঝড়ে কী আশ্চর্য, গাছের ডালগুলাে ফেটে চৌচির হয়ে গেলাে, আর গুঁড়িসুদ্ধ গাছগুলাে লুটিয়ে পড়লাে মাটিতে। লােকে বলতাে, গাছেরও প্রাণ আছে। পাপ সইবে কেন ?তারপর থেকে আবাদ শুরু হলাে এখানে। ঘর উঠলাে। বাড়ি উঠলাে। রাস্তাঘাট তৈরি হলাে। মহারানির নামে গড়া হলাে একটা পার্ক।আগে জনসভা হতাে এখানে। এখন হয় না। শুধু বিকেলে ছেলেবুড়ােরা এসে ভিড় জমায়। ছেলেরা দৌড়ঝাঁপ দেয়। বুড়ােরা শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেয়, চিনেবাদামের খােসা ছড়ায়। | এ হলাে গ্রীষ্মে অথবা বসন্তে। শীতের মরশুমে লােক খুব কম আসে, সন্ধ্যার পরে কেউ থাকে না।এবারে শীত পড়েছিলাে একটু বিদঘুটে ধরনের। দিনে ভয়ানক গরম। রাতে কনকনে শীত। সকালে কুয়াশায় ঢাকা পড়েছিলাে পুরাে আকাশটা। আকাশের অনেক নিচু দিয়ে মন্থরগতিতে ভেসে চলেছিলাে একটুকরাে মেঘ। উত্তর থেকে দক্ষিণে। রঙ তার অনেকটা জমাট কুয়াশার মতাে দেখতে।ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে ঠিক সেই মেঘের মতাে একটি ছেলেকে হেঁটে যেতে দেখা গেলাে নবাবপুরের দিকে। দক্ষিণ থেকে উত্তরে। পরনে তার একটা সদ্য-ধােয়ানাে সাদা সার্ট। সাদা প্যান্ট। পা জোড়া খালি। জুতাে নেই।

Summary

Tab Article

আরেক ফাল্গুন”বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃরাত দুপুরে সবাই যখন ঘুমে অচেতন তখন বৃটিশ-মেরিনের সেপাহীরা এসে ছাউনি ফেলেছিলাে এখানে। শহরের এ-অংশটায় তখন বসতি ছিলাে না। ছিলাে, সার-সার ঊর্ধ্বমুখী গাছের ঘন অরণ্য। দিনের বেলা কাঠুরের দল এসে কাঠ কাটতাে আর রাতে হিংস্র পশুরা চরে বেড়াতাে। শহরে তখন গভীর উত্তেজনা। লালবাগে সেপাহীরা যে-কোনাে মুহূর্তে বিদ্রোহ করবে। যে ক’টি ইংরেজ-পরিবার ছিলাে তারা সভয়ে আশ্রয় নিলাে বুড়িগঙ্গার ওপর গ্রিনবােটে।খবর পেয়ে যথাসময়ে বৃটিশ-মেরিনের সেনারা এসে পৌঁছেছিলাে আর শহরের এঅংশটা দখল করে তাঁবু ফেলেছিলাে এখানে। সে থেকে এর নাম হয়েছিল, আন্ডারগােরা ময়দান। লােকে বলতাে আন্ডারগােরার ময়দান। শেষরাতে, লালবাগ নিরস্ত্র সেপাহীদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করেছিলাে তারা। মানুষের রক্তে লালবাগের মাটি লাল হয়ে উঠে। কিছু সেপাহী মার্চ করে পালিয়ে যায় ময়মনসিংহের দিকে। যারা ধরা পড়ে, তাদের ফাঁসি দেয়া হয় আন্ডাগােরার ময়দানে। মৃতদেহগুলােকে ঝুলিয়ে রাখা হয় গাছের ডালে ডালে। লােকে দেখুক। দেশদ্রোহীর শাস্তি কত নির্মম হতে পারে, স্বচক্ষে দেখুক নেটিভরা।এসব ঘটেছিলাে একশাে বছর আগে। আঠারােশো সাতান্ন সালে। আন্ডারগােরার ময়দান এখনাে আছে। শুধু নাম পালটেছে তার। লােকে বলে, ভিক্টোরিয়া পার্ক। সে অরণ্য আজ নেই। মাঝে, একটা প্রচণ্ড ঝড় হয়েছিলাে। সে ঝড়ে কী আশ্চর্য, গাছের ডালগুলাে ফেটে চৌচির হয়ে গেলাে, আর গুঁড়িসুদ্ধ গাছগুলাে লুটিয়ে পড়লাে মাটিতে। লােকে বলতাে, গাছেরও প্রাণ আছে। পাপ সইবে কেন ?তারপর থেকে আবাদ শুরু হলাে এখানে। ঘর উঠলাে। বাড়ি উঠলাে। রাস্তাঘাট তৈরি হলাে। মহারানির নামে গড়া হলাে একটা পার্ক।আগে জনসভা হতাে এখানে। এখন হয় না। শুধু বিকেলে ছেলেবুড়ােরা এসে ভিড় জমায়। ছেলেরা দৌড়ঝাঁপ দেয়। বুড়ােরা শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেয়, চিনেবাদামের খােসা ছড়ায়। | এ হলাে গ্রীষ্মে অথবা বসন্তে। শীতের মরশুমে লােক খুব কম আসে, সন্ধ্যার পরে কেউ থাকে না।এবারে শীত পড়েছিলাে একটু বিদঘুটে ধরনের। দিনে ভয়ানক গরম। রাতে কনকনে শীত। সকালে কুয়াশায় ঢাকা পড়েছিলাে পুরাে আকাশটা। আকাশের অনেক নিচু দিয়ে মন্থরগতিতে ভেসে চলেছিলাে একটুকরাে মেঘ। উত্তর থেকে দক্ষিণে। রঙ তার অনেকটা জমাট কুয়াশার মতাে দেখতে।ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে ঠিক সেই মেঘের মতাে একটি ছেলেকে হেঁটে যেতে দেখা গেলাে নবাবপুরের দিকে। দক্ষিণ থেকে উত্তরে। পরনে তার একটা সদ্য-ধােয়ানাে সাদা সার্ট। সাদা প্যান্ট। পা জোড়া খালি। জুতাে নেই।

Related Books