তখন ঊনিশ’শ চৌষট্টি সাল বয়ে যাচ্ছে স্পর্ধিত তারুণ্যের উচ্চারণে টাল-মাটাল সময়। সে বছরেই অসংখ্য প্রতিভাধরের সূতিকালয় ময়মনসিংহে তরুন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহানের জন্ম। তারিখ ছিলো মার্চের পাঁচ। সেই-ই শৈশব গাঁয়ের দূর মাঠের কাছে বসেস ‘দুঃখ কী ? কেমন রঙ তাঁর ? খুঁজতে খুঁজতে জীবনের অর্ন্তজগতের স্বরূপ অন্বেষায় তিনি নেমে পড়েন, শব্দ আর বোদের ইট সুরকিতে স্বপ্ন-বাস্তবতার শিল্পসৌধ গড়তে। শিল্পের প্রত্নতাত্ত্বিক বলেই যাপনযোগ্য জীবনভূমির ধারাপাতে প্রতিটি পৃষ্ঠায়, শিরা-উপশিরায় মনোজগতের মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে অন্তর্গূঢ় রসহ্য ভেদ করে তুলে আনেন মানবের স্বপ্ন আর বাস্তবতার বহুমাত্রিকতাকে। শিল্প-জীবনের এ বন্ধুর পথে তাঁর অকৃত্রিম বন্ধু স্ব-নির্মিত ভাষাশৈলী। যা তাঁকে অকৃষ্ট বাংলা গদ্যে আপন মহিমায় স্বতন্ত্র আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ গোটা বিশ্বে যখন প্রকৃতি, মানুষের সবকিছুকেই পণ্য করে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে, তখন অসামান্য স্থিত ধীশক্তি নিয়ে মানুষ ও প্রকৃতির অনিবার্য দ্বান্দ্বিক সত্তার প্রচলিত অবকাঠামো-উপরিকাঠামোকে ভেঙে-চুরে নব-অবয়বে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বকীয় নিরীক্ষা প্রবণতায় তিনি নিমার্ণ করেন মনুষ্যত্ববোধের এক অসামান্য গদ্য-স্থাপত্য। নাসরী জাহান জীবন-যাপনের প্রাত্যহিকতার বৃত্তে বন্দী থাকতে চান না। ভ্রমণের প্রতি রয়েছে তাঁর দুর্মর কাঙ্ক্ষা, সঙ্গীতের প্রতি তাঁর রয়েছে সুগভীর প্রেম। ইতোমধ্যে শিল্প-শৈলীর অনবদ্যতার জন্য পেয়েছেন ‘ফিলিপস’ ও ‘আলাওল’ সাহিত্য পুরস্কার। পেশাগত জীবনে তিনি একটি পাক্ষিক পত্রিকায় সাহিত্য সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত।
About This Author