About This Books

ওরা টোকাই কেন

ওরা টোকাই কেন

  • Author: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
  • Publisher: আগামী প্রকাশনী
  • Category: উপন্যাস
  • ISBN: 9789840416875
1 Review

আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে খুব বেশিজন লেখালেখি করেন না। যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যেও শেখ হাসিনার নাম সহজে আসে না। ‘ওরা টোকাই কেন?’ বইটি তাই যদি পাঠকসমাজে একটু বিস্ময়ের সৃষ্টি করে, তাতে খুব অবাক হবার কিছু থাকবে না। ছটি প্রবন্ধ নিয়ে এ বই। এসব প্রবন্ধে ব্যক্তিগত কথা আছে, পারিবারিক কথা আছে, দেশের কথা আছে, দশের কথা আছে, রাজনীতির কথা আছে, সমাজের কতা আছে। নিজের চারপাশটা যেমন ভাবে দেখেছেন লেখিকা, তেমনি তা ফুটিয়ে তুলেছেন। যাকে বলা যায় ছক—কাটা রচনা, এ বইয়ের প্রবন্ধগুলো তা নয়। এগুলো হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত লেখাÑ তাই এক প্রসঙ্গে থেকে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছেন অনায়াসে। এক মানুষের কথা বলতে বলতে অন্য মানুষ বা একাধিক মানুষের কথা বলেছেন। গ্রামের প্রকৃতির কথা বলতে গিয়ে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথা উঠেছে, একটি মেয়ের কথা বলতে গিয়ে নারী—নির্যাতনের কথা উঠেছে, দারিদে্র্যর কথা বলতে গিয়ে স্বাস্থ্যের কথা এসেছে। স্বাস্থ্যের কথা প্রসঙ্গে এসেছে পরিবার—পরিকল্পনার কথা। সমাজের অধিকাংশ মানুষ অন্ন ব¯ চিকিৎসা আশ্রয়ের অভাবে পীড়িত। এই অভাব যে একটা সমাজব্যবস্থার ফল, সেই সমাজব্যবস্থায় মানুষ যে মানুষকে শোষণ করে চলেছে, সেই শোষণকে যে সুযোগ করে দিচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্বৈরাচার পাকাপোক্ত করতে যে ধর্মের নাম ব্যবহার করা হচ্ছেÑ এ সব কথাই তিনি বলেছেন। গভীর এক বেদনাবোধ থেকে শেখ হাসিনা অবলোকন করেছেন পারিপার্শ্বকে। সেই বেদনাবোধ ছড়িয়ে আছে অধিকাংশ স্থানে। জায়গায় জায়গায় লেখিকা যে—রচনাকুশলতার পরিচয় দিয়েছেন, তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। যেমন : বাইগার নদী এখন টুঙ্গিপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলেছে। রোদ ছাড়ালে বা জো্যৎস্না ঝরলে সে নদীর পানি রূপোর মতো ঝিকমিক করে। নদীর পাড় ঘেঁষে কাশবন, ধান—পাট—আখ ক্ষেত, সারি সারি খেজুর—তাল—নারকেল—আমলকি গাছ, বাঁশ—কলাগাছের ঝাড়, বুনো লতাপাতার জংলা, সবুজ ঘন ঘাসের চিকন লম্বা সতেজ ডগা। শালিক—চড়ূই পাখিদের কল—কাকলী, ক্লাš দুপুরে ঘুঘুর ডাকÑসব মিলিয়ে ভীষণ রকম ভালোলাগার একটুকরো ছবি যেন। আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে এই টুঙ্গিপাড়া গ্রামে আমার জš§। গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়া ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শাš নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল সাধারণ জীবনের মাধুর্যের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি। রচনার এই প্রসাদগুণ সর্বত্র দেখা যাবে না। কেননা স্মৃতির মধ্য দিয়ে দেখা সেই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ আর জীবনের একমাত্র সত্য নয়। আজ দেশের সর্বত্র অভাব আর অনাচার। তার কথা বলবার ভাষা আলাদা। তবে শুধু অভাব—অনাচারই সে সত্য তা নয়। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আছে, সেকথাও সমান সত্য। এই প্রতিবাদ করে টোকাইরা, প্রতিবাদ করে নর হোসেন, তাদের কথা দিয়ে বইয়ের শেষ। তবে তাদের কথা শেষ হবার নয়। বাংলা বিভাগ আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১ ফ্রেব্র“য়ারি ১৯৮৯

Summary

Tab Article

আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে খুব বেশিজন লেখালেখি করেন না। যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যেও শেখ হাসিনার নাম সহজে আসে না। ‘ওরা টোকাই কেন?’ বইটি তাই যদি পাঠকসমাজে একটু বিস্ময়ের সৃষ্টি করে, তাতে খুব অবাক হবার কিছু থাকবে না। ছটি প্রবন্ধ নিয়ে এ বই। এসব প্রবন্ধে ব্যক্তিগত কথা আছে, পারিবারিক কথা আছে, দেশের কথা আছে, দশের কথা আছে, রাজনীতির কথা আছে, সমাজের কতা আছে। নিজের চারপাশটা যেমন ভাবে দেখেছেন লেখিকা, তেমনি তা ফুটিয়ে তুলেছেন। যাকে বলা যায় ছক—কাটা রচনা, এ বইয়ের প্রবন্ধগুলো তা নয়। এগুলো হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত লেখাÑ তাই এক প্রসঙ্গে থেকে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছেন অনায়াসে। এক মানুষের কথা বলতে বলতে অন্য মানুষ বা একাধিক মানুষের কথা বলেছেন। গ্রামের প্রকৃতির কথা বলতে গিয়ে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথা উঠেছে, একটি মেয়ের কথা বলতে গিয়ে নারী—নির্যাতনের কথা উঠেছে, দারিদে্র্যর কথা বলতে গিয়ে স্বাস্থ্যের কথা এসেছে। স্বাস্থ্যের কথা প্রসঙ্গে এসেছে পরিবার—পরিকল্পনার কথা। সমাজের অধিকাংশ মানুষ অন্ন ব¯ চিকিৎসা আশ্রয়ের অভাবে পীড়িত। এই অভাব যে একটা সমাজব্যবস্থার ফল, সেই সমাজব্যবস্থায় মানুষ যে মানুষকে শোষণ করে চলেছে, সেই শোষণকে যে সুযোগ করে দিচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্বৈরাচার পাকাপোক্ত করতে যে ধর্মের নাম ব্যবহার করা হচ্ছেÑ এ সব কথাই তিনি বলেছেন। গভীর এক বেদনাবোধ থেকে শেখ হাসিনা অবলোকন করেছেন পারিপার্শ্বকে। সেই বেদনাবোধ ছড়িয়ে আছে অধিকাংশ স্থানে। জায়গায় জায়গায় লেখিকা যে—রচনাকুশলতার পরিচয় দিয়েছেন, তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। যেমন : বাইগার নদী এখন টুঙ্গিপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলেছে। রোদ ছাড়ালে বা জো্যৎস্না ঝরলে সে নদীর পানি রূপোর মতো ঝিকমিক করে। নদীর পাড় ঘেঁষে কাশবন, ধান—পাট—আখ ক্ষেত, সারি সারি খেজুর—তাল—নারকেল—আমলকি গাছ, বাঁশ—কলাগাছের ঝাড়, বুনো লতাপাতার জংলা, সবুজ ঘন ঘাসের চিকন লম্বা সতেজ ডগা। শালিক—চড়ূই পাখিদের কল—কাকলী, ক্লাš দুপুরে ঘুঘুর ডাকÑসব মিলিয়ে ভীষণ রকম ভালোলাগার একটুকরো ছবি যেন। আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে এই টুঙ্গিপাড়া গ্রামে আমার জš§। গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়া ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শাš নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল সাধারণ জীবনের মাধুর্যের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি। রচনার এই প্রসাদগুণ সর্বত্র দেখা যাবে না। কেননা স্মৃতির মধ্য দিয়ে দেখা সেই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ আর জীবনের একমাত্র সত্য নয়। আজ দেশের সর্বত্র অভাব আর অনাচার। তার কথা বলবার ভাষা আলাদা। তবে শুধু অভাব—অনাচারই সে সত্য তা নয়। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আছে, সেকথাও সমান সত্য। এই প্রতিবাদ করে টোকাইরা, প্রতিবাদ করে নর হোসেন, তাদের কথা দিয়ে বইয়ের শেষ। তবে তাদের কথা শেষ হবার নয়। বাংলা বিভাগ আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১ ফ্রেব্র“য়ারি ১৯৮৯

Related Books